বাইক চালানোর নিয়ম: আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের জানাবো, ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইক চালানোর নিয়ম। বাইক নিয়ে ঘুরতে কম-বেশি কার না ভালো লাগে। বাইক চালানোর সময় জেনে না বুঝে অনেক সময়ে রাস্তায় রাইডাররা ভুল করে থাকেন। যার ফলে ট্রাফিক জরিমানা সহ মারাত্মক ধরনের দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
|
ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইক চালানোর নিয়ম |
এমনকি একটি দুর্ঘটনায় সারা জীবনের কান্নায় পরিণত হয়। তাই বাইক চালনার নিয়ম কানুন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা দরকার। বাইক চালানোর নিয়ম শিখতে শুধুমাত্র বাইক রাইড শিখলেই হবে না রাস্তার বিভিন্ন ট্রাফিক আইন-কানুন সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও রাস্তার বিভিন্ন দুর্যোগ পরিস্থিতি অপেক্ষা করে বাইক চালানোর নিয়ম গুলো জানতে হবে।
আপনাদের মধ্যে যারা নতুন ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইক চালানোর নিয়ম শিখতে ইচ্ছুক তাদের জন্য আজকের পোস্টটি অনেক সাহায্যকারী হতে চলছে কারণ বাইক চালানোর নিয়ম সম্পর্কে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে এই পোস্টে জানতে পারবেন। তাই বাইক চালানোর নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। চলুন শুরু করা যাক -
পোস্ট সূচীপত্রঃ
- ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইক চালানোর নিয়ম
- নতুনদের জন্য বাইক চালানোর নিয়ম
- বাইক চালানো শেখানো হয় কোথায়
- ছোট/ কাচা রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম
- মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম
- বৃষ্টিতে বাইক চালানোর নিয়ম
- জ্যামে বাইক চালানোর নিয়ম
|
how to ride a motorcycle for beginners |
ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইক চালানোর নিয়ম
আপনারা যারা নতুন এখনো বাইক চালানোর নিয়ম, জানেন না তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলছিঃ ভয়ের কোন কারণ নেই নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখুন। ১০ জন পারলে আপনিও পারবেন। আপনার বাসায় কি বাইক আছে আমি জানিনা তবে আমার এই পোস্টে শেখানো বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী বাসায় যে কোন বাইক চালানোর চেষ্টা করবেন।
আশা করছি আপনি খুব অল্প সময়ে বাইক চালানোর নিয়ম শিখে যাবেন। আমি এখন মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কয়েকটি ধাপে শেখাব।
ধাপ সমূহঃ নতুনদের জন্য বাইক চালানোর নিয়ম
প্রথম ধাপঃ প্রথমে আপনি একটি বাইক নিন। বাইকে তালা দেয়া থাকলে তালা খুলে ফেলুন। এরপর বাইক স্টান পজিশন থাকলে স্টান তুলে গাড়ির উপর চেপে বসুন। এরপর নিশ্চিত হন যে বাইকে ট্যাঙ্কে (Fuel) তেল আছে কিনা। আর তেল থাকলে তেলের চাবি অন পজিশনে আছে কিনা দেখে নিন।
দ্বিতীয় ধাপঃ এখন বাইকের চাবি Ignition Switch এর মধ্যে প্রবেশ করান। এরপর বাইকের চাবি ডান পাশে ঘুরিয়ে অন পজিশনে রাখুন। মিটারে লাইট আসলে অথবা হর্ন বাজিয়ে পরীক্ষা করবেন চাবি অন হয়েছে কি না।
তৃতীয় ধাপঃ এরপর বাইকের গিয়ার সিস্টেম নিউটল আছে কিনা পরীক্ষা করুন। মিটারে সবুজ রঙের (N) (N=Neutral) লেখা থাকলে বুঝবেন গিয়ার নিউটল আছে। কিছু কিছু বাইকে গিয়ার নিউটল না করে ক্লাস চেপে ধরে স্টার্ট করা যায়। আপনার বাইকে এই সিস্টেম না থাকলে গিয়ার Neutral করে নিন।
চতুর্থ ধাপঃ এরপর বাইকের ডান হাতের একসিলেটর (Acselerator) পিকাপ বা গিয়ার অনেকেই এক এক নামে চেনেন। যাই হোক একসিলেটর হালকা করে টেনে ধরে সাথে সাথে সেলফ (Self) চেপে ধরুন। আর যাদের বাইকে সেলফ নেই তারা পায়ের কিকারে (kicker) জোরে প্রেস করুন। দেখবেন বাইক স্টার্ট হয়ে গিয়েছে।
|
বাইক চালানোর নিয়ম |
পঞ্চম ধাপঃ বাইক স্টার্ট হয়ে গেলে এখন বাম হাতের ক্লাস (Clutch) চেপে ধরুন। আর ডান হাতের একসিলেটর ভাল ভাবেই ধরে রাখুন যেন ইঞ্জিন বন্ধ না হয়।
ষষ্ঠ ধাপঃ এরপর বাম পা গিয়ারের উপরে রাখুন। ক্লাস চেপে রেখে প্রথম (১) গিয়ার দিন। অর্থাৎ আপনার বাইকের প্রথম গিয়ার যে দিকে (সামনে বা পিছনে) সেই দিকে একবার পায়ের টু বা গোরা দিয়ে চাপ দিন।
সপ্তম ধাপঃ খুব মনোযোগ সহকারে খেয়াল করুন। বাইকের ইঞ্জিন যেন বন্ধ না হয় সেই ভাবে এক্সেলেটর বা পিকআপ ভালো হবে ধরে রাখুন। এরপর আস্তে আস্তে ক্লাস ছেড়ে দিতে থাকবেন আর পা দিয়ে সামনের দিকে যেতে থাকবেন। যেভাবে ক্লাস আস্তে আস্তে ছেড়ে দিবেন ঠিক সেই ভাবেই এক্সেলেটর বাড়িয়ে দিবেন অর্থাৎ টেনে রাখবেন।
অষ্টম ধাপঃ এখন বাইক রানিং হয়ে গেলে দুই পা বাইকে তুলে রাখবেন এভাবেই ১ গিয়ারে রেখে দূর সামনে যেতেই থাকবেন। মনে রাখবেন ১ গিয়ারে এক্সেলেটর বেশি টানা যাবে না।
নবম ধাপঃ এভাবে বাইক রানিং অবস্থায় চলতে চলতে এক্সেলেটর আরেকটু বাড়িয়ে দিবেন এরপর ক্লাস চেপে ধরবেন তারপর ২ নাম্বার গিয়ারে দিবেন। এভাবেই বাইক রানিং অবস্থায় কিছুদূর চলতে থাকবেন। তবে এক গিয়ারের তুলনায় দুই গিয়ার দিলে এক্সেলটর বেশি দিয়ে আরেকটু স্পিড দিয়ে বাইক চালাবেন।
এভাবে একই নিয়মে তৃতীয় গিয়ার চতুর্থ গিয়ার এবং পঞ্চম গিয়ার থাকলে, গিয়ার পরিবর্তন করে বাইক চালাবেন। উদাহরণঃ ১, N, ২, ৩, ৪, ৫ গিয়ার।
দশম ধাপঃ আবার গাড়ি যখন ধীরে চালাবেন তখন ব্রেক করে গাড়ির গতি কমিয়ে নিবেন এরপর এক্সেলেটর কমিয়ে দিয়ে ক্লাস চেপে ধরে গিয়ার পরিবর্তন করবেন। অর্থাৎ উল্টাে বা বিপরীত দিকে গিয়ার পরিবর্তন করবেন যথাঃ গিয়ার ৫, ৪, ৩, ২, N, ১ গিয়ার। এরপর গাড়ি একবারে থেমে গেলে নিউটল করবেন।
বাইক চালানো শেখানো হয় কোথায়
বাইক চালানো শেখার যাদের আগ্রহ আছে তাদের কাছে এই প্রশ্নটা যে বাইক চালানো শেখানো হয় কোথায়। চারচাকা বিশিষ্ট গাড়িগুলো যেভাবে সহজে শেখানো হয় আসলে বাইক চালানো শেখার সেভাবে কোন প্রতিষ্ঠান দেখা যায় না। তবে বিভিন্ন শহরে বাইক চালানোর কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে শেখানো হয়। এক্ষেত্রে বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ খরচ তাদেরকে দিতে হয় তবে সচরাচর সব জায়গায় এই ব্যবস্থা দেখা যায় না।
চারচাকা বিশিষ্ট গাড়ি চালানো শিখতে চাইলে প্রায় সব জেলায় উপজেলায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার সাহায্যে খুব সহজেই গাড়ি চালানো শেখা যায়। আমার পরামর্শ হলো আপনি যদি বাইক চালানো শিখতে চান আপনার বাইক না থাকলে বাসার আশেপাশে পরিচিত আত্মীয় স্বজনের কাছে বাইক চালানো শিখতে পারেন।এক্ষেত্রে আপনার আলাদাভাবে কোন খরচ গ্রহণ করতে হবে না আর আপনি ইচ্ছামত যখন তখন শিখতে পারবেন।
ছোট/ কাচা রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম
মহাসড়ক কিংবা পাকা রাস্তায় বাইক চালানোটা যত সহজ তার চেয়ে কঠিন ছোট বা কাঁচা রাখায় বাইক চালানো। তার কারণ হলো মহাসড়কে লেন অনুযায়ী সহজে বাইক চালানো যায় কিন্তু ছোট বা কাঁচা রাস্তায় অধিক মোড় থাকার কারণে বাইক চালনা অনেকটাই সমস্যা সৃষ্টি হয়। ছোট বা কাঁচা রাস্তা গতি কমিয়ে বাইক চালাতে হয়।
দ্রুত গতি বা অসাবধানতার কারণে যেকোনো সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ রইল যারা নতুন বাইক চালানো শিখতে চাচ্ছেন তারা অবশ্যই ছোট বা কাঁচা রাস্তায় খুব সাবধানতা সাথে বাইক চালাবেন।
মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম
মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর পূর্বে অবশ্যই মহাসড়ক সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কারণ হল মহাসড়কে সব সময় সকল ধরনের গাড়ি অনবরত চলতে থাকে এক্ষেত্রে মহাসড়ক সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার সম্মুখীন পড়তে পারেন। যেমন মহাসড়কে কোন লেনে চললে কত গতিতে চলতে হয় এবং মহাসড়কে থাকা বিভিন্ন ট্রাফিক সাইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
মহাসড়কে অধিক গতি গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে কোনভাবেই বাইক চালানো যাবে না। ঘনঘন লেন পরিবর্তন বা ওভারটেক করা যাবে না। এক গাড়ি থেকে আরেক গাড়ির দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ট্রাফিক আইন অনুযায়ী সিগন্যাল গুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে। আশা করি মহাসড়কের ট্রাফিক আইন মেনে বাইক চালালে অনেক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার সম্ভাবনা থাকে।
বৃষ্টিতে বাইক চালানোর নিয়ম
বৃষ্টিতে বাইক চালানোর নিয়ম অনেকটা কঠিন বটে। কেননা স্বাভাবিক সময়ে বা ভালো আবহাওয়ার সময় যেভাবে সহজে বাইক চালানো যায় বৃষ্টিতে বাইক চালানো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেকটা বিপদ মুখী ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কারণ হলো যেকোনো সময় বাইকের চাকা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনায় থাকে।
বৃষ্টিতে বাইক চালানোর সময় সব সময় খেয়াল রাখতে হবে বাইকের গতি স্বাভাবিক আছে কিনা আর কোনভাবেই হঠাৎ করে ব্রেক করা যাবে না। বাইক ব্রেক করতে হলে অবশ্যই পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ধীরে ধীরে ব্রেক করতে হবে। ছোট ও কাঁচা রাস্তা হলে বৃষ্টির দিনে আরও সাবধানতার সাথে বাইক চালাতে হবে ।কারণ কাছারা চায় বৃষ্টির দিনে বেশি সমস্যা সৃষ্টি হয় আর এর কারণে সাবধানতার সাথে বাইক চালাতে হবে।
জ্যামে বাইক চালানোর নিয়ম
ফাঁকা বা স্বাভাবিক রাস্তায় বাইক যেভাবে সহজে চালানো যায় জ্যামে বাইক চালানো ততটা সহজ নয় । জ্যামে বাইক চালানোর জন্য অতি সাবধানতার সাথে বাইক চালানো উচিত। বিশেষ করে জ্বালানি সাশ্রয়ীর দিক তাকালে সঠিকভাবে বাইক চালানোর নিয়ম না জানলে জ্বালানি খরচটা অনেকটাই বেড়ে যাবে।
যেখানে দুই তিন মিনিটের বেশি সময় ধরে জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে সেখানে অবশ্যই ইঞ্জিন বন্ধ রাখা উচিত। জ্যামে বাইক চালানোর সময় ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করা যাবে না। ট্রাফিক আইন সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। আর এর জন্য ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। জমি বাইক চালানোর সময় কোনভাবেই অযথা ওভারটেক করা উচিত নয়।
শেষ কথাঃ
আশা করি আপনারা পোষ্টি পড়ে ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইক চালানোর নিয়ম সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আমার বাইক চালানোর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে শেখানোর চেষ্টা করেছি। আপনি শিখতে পারলে এটাই আমার সফলতা। বাইক সম্পর্কে অন্যান্য সকল ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিজিট করুন।