ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইকের যত্ন টিপস | Discover 125 Bike Maintenance Tips
ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইকের যত্ন: আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের জানাবো, ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইকের যত্ন টিপস। মোটরসাইকেল দুই চাকা বিশিষ্ট একটি ছোট বাহন যার সাহায্যে যান-জট অলি-গলি কিংবা কাঁচা পাকা রাস্তা দিয়ে সহজে চলা যায়।
তাইতো এই ছোট বাহনটিকে রাস্তায় চলাচলের প্রধান মাধ্যম হিসেবে অনেকই বেছে নেন। এই দুই চাকা বিশিষ্ট মোটরসাইকেলে রয়েছে ছোট্ট একটি ইঞ্জিন যার সাহায্যে চালক ও একাধিক আরোহীকে নিয়ে ছুটে চলে গ্রাম, শহর কিংবা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
আরো পড়ুনঃ বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারণ জানুন
তবে বাইক নিয়ে যাত্রার সময় প্রায়ই মনে হয় কখন যেন কোন যান্ত্রিক সমস্যা নিয়ে রাস্তায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় যেমনঃ হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া, চেইন শব্দ করা বা পড়ে যাওয়া, চাকা পাংচার হওয়া, ইঞ্জিনের ভিতরে বিভিন্ন শব্দ করা, চাকা হঠাৎ জ্যাম হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
এ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে বাচতে বা মোটরসাইকেলের সুরক্ষা পেতে অবশ্যই নিয়মিত বাইকের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
নিয়মিত বাইকের যত্ন নিলে রাস্তায় কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। আর যাত্রা পথে নিশ্চিন্তে এই দুই চাকার বাহনে চড়ে পৌঁছা যাবে নিজের গন্তব্য স্থানে। ছোট ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই বাইকের কোন ধরনের মেইনটেন্স কোন সময় করতে হবে এ বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা দরকার। এছাড়াও মোটরসাইকেলের বিভিন্ন পার্টস বা যন্ত্রাংশ সম্পর্কেও বেসিক ধারণা রাখা দরকার।
আমি নিজেও ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইক ব্যবহার করি। দীর্ঘ চার বছর এই বাইক ব্যবহারকালে অনেক সমস্যা ফেস করেছি। সেই আলোকে অভিজ্ঞতা গুলো আপনাদের সাথে এই পোস্টে শেয়ার করব। ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইকের যত্ন ও মোটরসাইকেলের সুরক্ষা সম্পর্কিত আরো একাধিক পোস্ট এই ওয়েব সাইটে পাবলিশ করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ বাইকের গিয়ার পরিবর্তনের নিয়ম
আপনাদের মধ্যে যারা ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইকের যত্ন টিপস সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাদের জন্য আজকের পোস্টটি অনেক সাহায্যকারী হতে চলছে কারণ বাইকের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার নিয়ম সম্পর্কে এই পোস্টে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। চলুন শুরু করা যাক -
আপনি এই পোস্টে ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইকের যত্ন টিপস ও আরও যে সকল বিষয়ে জানতে পারবেন তার সূচিপত্র নিচে দেয়া হলো যথাঃ
- বাইকের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ টিপস।
- নতুন মোটরসাইকেল সার্ভিসিং কি কি করাবেন ?
- বাইকের নিয়মিত সার্ভিসিং কি করবেন ?
- গরমে বাইকের যত্ন নেয়ার নিয়ম।
বাইকের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ টিপস
মোটরসাইকেল বাহন হিসেবে মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মোটরসাইকেলের দীর্ঘদিন পারফরম্যান্স ভালো রাখার জন্য সঠিকভাবে যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার। নতুন বা পুরাতন বাইকে কিভাবে সঠিকভাবে যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করবেন সেই টিপসগুলো এখন আমি পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব। তাই মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়তে থাকুন।
বাইকের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ টিপস
নতুন মোটরসাইকেল সার্ভিসিং কি কি করাবেন ?
নতুন বাইক সার্ভিসিং: নতুন বাইক কেনার পর কোম্পানি কিছু ফ্রি সার্ভিস এবং পেইড সার্ভিসিং দিয়ে থাকে। যা একটি বাইকের দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য কোম্পানির এই প্রাথমিক সার্ভিস গুলো নিতে হবে। কারণ একটি বাইক নতুন অবস্থায় সব পার্টস গুলো কিছু দিন পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হয়, যে কোন প্রকার সমস্যা হয় কিনা।
তাছাড়া নতুন বাইকের ওয়ারেন্টি পেতে হলে অবশ্যই কোম্পানির দেয়া সার্ভিসিং গুলো সম্পূর্ণ নিতে হবে। কোন কারনে সার্ভিসিং নিতে ব্যর্থ হলে কোম্পানির দেয়া শর্ত অনুযায়ী ওয়ারেন্টি প্রযোজ্য হবে না। একটি নতুন মোটরসাইকেল সার্ভিসিং করানোর সময় যে কাজ গুলো সার্ভিসিং সেন্টারে করাবেন।
নতুন বাইক সার্ভিসিং এর কাজ সমূহঃ
প্রথম কাজঃ মোটরসাইকেলটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
দ্বিতীয় কাজঃ চাকার প্রেসার চেক করুন। চাকার প্রেসার কম বা বেশি হলে সঠিক পরিমাণে রাখুন।
তৃতীয় কাজঃ নিম্ন লিখিত যন্ত্রগুলো সঠিকভাবে কাজ করে কিনা দেখে নিন। যথাঃ ইগনিশন সুইচ / স্পিডো মিটার / টেকোমিটার / ইঞ্জিন স্টপ সুইচ / হর্ন / হেড লাইট / অন্যান্য লাইট / স্টিয়ারিং লক।
উপরের যন্ত্রাংশগুলো যদি কোন ধরনের সমস্যা মনে করেন তাহলে অবশ্যই সার্ভিসিং সেন্টারে তাদেরকে সমস্যাটি দেখিয়ে দিন এবং তা সমাধান করে নিন।
চতুর্থ কাজঃ সব নাট বোলট বিশেষ করে ইঞ্জিন মাউন্টিং সিলিন্ডার হেড, স্টিয়ারিং কলাম এবং সক এবজর বার এর না ঠিকমত টাইট আছে কিনা দেখে নিন। প্রয়োজনে ঠিক করে নিন।
পঞ্চম কাজঃ এক্সেলারেটর / ক্লাচ / ক্লাচ লিভার এবং পেট্রোল ট্যাপ ঠিকমত কাজ করে কিনা দেখুন।
ষষ্ঠ কাজঃ স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার করুন এবং গ্যাপ ঠিক করুন।
সপ্তম কাজঃ ইঞ্জিনের আইডেল আরপিএম ঠিক করুন।
অষ্টম কাজঃ পিছনের সক এবজরবার সেটিং ঠিক আছে কিনা দেখুন প্রয়োজনে ঠিক করুন।
নবম কাজঃ সামনের এবং পেছনের ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে কিনা দেখুন এবং প্রয়োজনের ঠিক করুন।
দশম কাজঃ ইঞ্জিন অয়েল বদলে দিন। অবশ্যই কোম্পানির দেয়া সাজেশন মোতাবে সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন।
১১ তম কাজঃ ইঞ্জিন ওয়েল পাম্প ঠিকমতো কাজ করে কিনা দেখুন প্রয়োজনে ঠিক করুন।
১২ তম কাজঃ চেইনে ওয়েল দিন এবং এর টেনশন ঠিক করুন।
১৩ তম কাজঃ ব্যাটারি ইলেকট্রোলাইট ঠিক আছে কিনা দেখুন। প্রয়োজনে লেবেল ঠিক করুন।
১৪ তম কাজঃ সার্ভিস ম্যানুয়াল অনুযায়ী লুব্রিকেশন করুন।
১৫ তম কাজঃ মোটরসাইকেলটি ডেলিভারি নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই চালিয়ে দেখুন।
১৬ তম কাজঃ মোটরসাইকেলটি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভালো হবে পরিষ্কার করুন ।
বাইকের নিয়মিত সার্ভিসিং কি করাবেন ?
একটি নতুন বাইক কোম্পানির দেয়া ফ্রি সার্ভিস এবং পেইড সার্ভিসিং নেয়ার পর বেশ ভালোই পারফরমেন্সের সাথে চলতে থাকে। দীর্ঘদিন চলতে চলতে বাইকের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের নাট বোল্ট ঢিলা সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষয় হতে থাকে। এছাড়াও রাস্তাঘাটে তীব্র রোদে, ধুলাবালি, এবং ঝড় বৃষ্টিতে চলতে চলতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশে ময়লা জমে থাকে।
তাই বাইকের সব সময় পারফরম্যান্স ধরে রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও সার্ভিসিং করতে হবে। আপনার বাইকে কোন সার্ভিসিং গুলো সব সময় করবেন আমি সে বিষয়গুলো ধাপে ধাপে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তাই মনোযোগ সহকারী পোস্টটি পড়তে থাকুন।
ইঞ্জিন অয়েল বদলি: বাইকের পারফরম্যান্স ভালো রাখতে সঠিক সময়ে এবং সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন। প্রতি ২৫০০ কিলোমিটার পর ইঞ্জিন অয়েল বদলি করুন।
এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার/ পরিবর্তন: সঠিক সময়ে এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করুন। ধোলাবালির মধ্য দিয়ে বাইক চালালে এয়ার ফিল্টার দ্রুত পরিষ্কার করুন। এয়ার ফিল্টারের মাল বেশি খারাপ হলে তা পরিবর্তন করুন।
চেইনের যত্ন: বাইকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে চেইন। চেইন মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে ঢিলা হয়েছে কিনা বা লুব্রিকেশন আছে কিনা। চেইন ঢিলা হলে ঠিক করে নিন আর লুব্রিকেশন করে নিন।
আরো পড়ুনঃ বাইক চালানোর নিয়ম
ব্যাটারির যত্ন: বাইকে ইঞ্জিন স্টার্ট করা, হর্ন বাজানো, সমস্ত লাইট জালানো এবং সমস্ত ইলেকট্রিক ফাংশনের কাজে ব্যাটারি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই ব্যাটারির নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। ব্যাটারির লিড ও টার্মিনাল পোস্টগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। ব্যাটারিতে ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে। ব্যাটারি বেশি খারাপ হয়ে গেলে পরিবর্তন করতে হবে।
যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করা: বাইক চালানোর পূর্বে অবশ্যই বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করা দরকার। বাইক চালানোর পূর্বে যে সকল জিনিস চেক করবেন যথাঃ ফুয়েলের পরিমাণ, চাকার হাওয়া, ইঞ্জিন অয়েলের পরিমাণ, ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে কিনা, ক্লাচ কাজ করে কিনা, চাকার নাট সহ অন্যান্য কোন নাট ঢিলা আছে কিনা, হর্ন বাজে কিনা। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে এ সকল যন্ত্রাংশের পরীক্ষা বাইক চালানোর পূর্বে নিয়মিত করা দরকার।
পরিষ্কার করা: বাইকের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মরিচা রোদে কিংবা গাড়ির রং দীর্ঘদিন ধরে রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। বাইক সার্ভিসিং পয়েন্ট গুলোতে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি বাসায় শ্যাম্পু ব্যবহার করেও পরিষ্কার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন মোটরসাইকেল অতিরিক্ত পানির চাপে ধোবেন না।
ঢেকে রাখা ও ছায়ায় রাখা: রোদ ও ধুলাবালি থেকে বাইকে রক্ষা করার জন্য কভার ব্যবহার করে ঢেকে রাখুন। আর ছায়ার ব্যবস্থা থাকলে সেখানে পার্কিং করুন।
গরমে বাইকের যত্ন নেয়ার নিয়ম |
গরমে বাইকের যত্ন নেয়ার নিয়ম
মানুষের কর্মমুখী জীবন কখনোই থেমে থাকে না প্রচন্ড শীত বা গরমে। আর এই জনজীবনের ছোট্ট বাহন হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে মোটরসাইকেল। তীব্র গরমে মানুষ যেমন চরম হতাশায় ভুগতে থাকে তেমনি ইঞ্জিন চালিত এই মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উত্তপ্ত হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় বাইকের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ একটু বেশি করা দরকার।
এই তীব্র গরমে একজন চালক হিসেবে নিজের সুরক্ষার জন্য আরামদায়ক কাপড় এবং হেলমেট পরিধান করা দরকার। এই গরমে কিছু বাইকে ইঞ্জিন ঠান্ডা করার জন্য কুল্যান্ট ব্যবহার হয়। কুল্যান্ট লেবেল ঠিক আছে কিনা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। এই সময় ব্যাটারির ইলেক্ট্রোলাইট লেভেল ঠিক আছে কি না পরীক্ষা করুন। এছাড়া সমস্ত ইলেকট্রিক ফাংশনগুলো বা লাইনগুলো ঠিক আছে কিনা চেক করুন।
টায়ারের হাওয়া পরীক্ষা করুন। প্রচন্ড গরমে টায়ারে হাওয়ার পরিমান বেশি রাখবেন না। কারণ এই সময়ে রাস্তায় অনেক উত্তপ্ত থাকে যার ফলে টায়ার ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই প্রচন্ড গরমে ফুয়েল ট্যাংক এর উপরে নজর দিতে হবে বেশি।
ফুয়েল ট্যাংকে এই সময় তেল পরিপূর্ণ রাখা যাবে না। অর্ধেক বা তার কমবেশি রাখলে ভালো হয়। চেইন নিয়মিত পরীক্ষা করুন টেনশন ঠিক আছে কিনা দেখুন এবং লুব্রিকেশন করুন।
শেষ কথা: আশা করি আপনারা পোস্টটি পড়ে বাইকের যত্ন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্ক বুঝতে পেরেছেন। ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইক সম্পর্কে অন্যান্য সকল ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিজিট করুন।