বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন | Bike Fuel Consumption Per Litre

বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন: আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের জানাবো, বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন। মোটরসাইকেলে জ্বালানি খরচ বেড়ে গেলে আমরা বাইক  সার্ভিসিং বা বাইক মেকানিকদের কাছে যেয়ে থাকি, মেকানিকরা কার্বোরেটর চোক বা স্ক্রু  ঘুরিয়ে জ্বালানির সাশ্রয় করার জন্য টিউন করে থাকে। কিন্তু বাইকের কার্বোরেটর টিউন করার পরও মাইলেজ কমই থেকে যায়।

বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন
বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন

আসলে বাইকের মাইলেজ শুধুমাত্র কার্বুরেটরের উপরে নির্ভর করে না। বাইকের তেল বেশি খাওয়ার কারণ অনেক রয়েছে। তাই বাইকের প্রত্যাশিত মাইলেজ পাওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। আর এই গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয় সম্পর্কে আমি এই পোস্টে আপনাদের  সম্পূর্ণ ধারণা দেবো।

আরো পড়ুনঃ ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইকের যত্ন টিপস

আপনাদের মধ্যে যারা বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন এবং বাইকের জ্বালানি সাশ্রয় করার উপায় টিপস গুলো সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাদের জন্য আজকের পোস্টটি অনেক সাহায্যকারী হতে চলছে কারণ বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন সম্পর্কে এই পোস্টে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। চলুন শুরু করা যাক -

আপনি এই পোস্টে বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন ও বাইকের জ্বালানি সাশ্রয় করার উপায় সম্পর্কে আরও যে বিষয় গুলো জানতে পারবেন তার সূচিপত্র নিচে দেয়া হলো যথাঃ
  • বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারণ কি ? 
  • কোন গাড়ি তেল কম খায় ? 


বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন
বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন


বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারণ সমূহ 

১) চাকা জ্যাম: আপনার বাইকের চাকা ফ্রি ভাবে  ঘুরছে কিনা পরীক্ষা করুন। বিশেষ করে নিউটল পজিশনে চেক করুন যে চাকা ফ্রি ভাবে ঘুরছে কিনা। অনেক সময় চাকা জ্যাম হয়ে থাকে। চাকা অনেক কারণেই জ্যাম হতে পারে যেমন বিয়ারিং খারাপ হলে বা ভেঙ্গে গেলে, ব্রেক অতিরিক্ত টাইট থাকলে, চেইন অতিরিক্ত টাইট থাকলে।

ইঞ্জিনের উৎপাদিত শক্তি যখন চাকা পর্যন্ত পৌঁছায় তখন চাকা সঠিকভাবে না ঘুরলে জ্বালানি খরচ বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত বাইকের চাকা পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে চাকা সঠিকভাবে ঘুরছে কিনা। 

২) দুর্বল পিস্টন রিং: সিলিন্ডারের ভিতরে পিস্টন  এবং রিং থাকে। যখন ইঞ্জিন ঘুরতে থাকে তখন পিস্টন সিলিন্ডারের ভিতরে অনবরত চলতে থাকে। জ্বালানি এবং বাতাস এর সংমিশ্রণ সিলিন্ডারের ভিতরে পিস্টনের চাপে প্রবল চাপের সৃষ্টি করে, এদিকে স্পার্ক প্লাগ এর সাহায্যে তা প্রজ্বলিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন হয় যার ফলে ইঞ্জিন ঘুরতে থাকে।

আরো পড়ুনঃ বাইকের গিয়ার পরিবর্তনের নিয়ম

কিন্তু রিং পিস্টন দুর্বল থাকলে ইঞ্জিন অয়েল চেম্বারে চলে আসে যার ফলে প্রজ্জলন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যার কারণে শক্তি কম উৎপন্ন হয় এবং মাইলেজ কম হয়।

৩) ভালভ ক্লিয়ারেন্স: কম মাইলেজ দেয়া এবং কম শক্তি উৎপাদনের একটি বড় কারণ। ভালভ অতিরিক্ত টাইট করলে ইঞ্জিনের শব্দ  কমিয়ে দেয় তবে টাইমিং চেইন এর ওপর প্রেসার ফেলে। যার ফলে ইঞ্জিনের ঘূর্ণন গতিতে প্রভাব পড়ে বা বাধা সৃষ্টি করে।

আর এই কারণে জ্বালানি খরচ বেশি হয় এবং টাইমিং চেইনও দ্রুত নষ্ট হয়। তাই বাইকের ভালো পারফরম্যান্স পেতে ভাল্বের সঠিক ক্লিয়ারেন্স রাখা দরকার।

৪) কার্বোরেটর: কার্বোরেটরের সাহায্যে তেল/ বাতাস কম ও বেশি করা যায়। কার্বোরেটরের সাহায্যে জ্বালানি এবং বাতাসের মিশ্রণ সিলিন্ডারে প্রবেশ করে। কার্বোরেটের বডিতে কয়েকটি স্ক্রু বা নাট থাকে যে গুলোকে ঘুরিয়ে তেল/ বাতাস কম বেশি করা যায়। তবে অভিজ্ঞ লোক ছাড়া এই স্ক্রু গুলো ঘোরানো ঠিক না।

উল্টাপাল্টা ঘোরালে তেল সাশ্রীর চেয়ে আরো তেল খরচ বেড়ে যেতে পারে। তাই আমি বলব ভালো একজন মেকানিক দিয়ে এই কার্বোরেটর টিউন করে নিন।

৪) সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল: নির্দিষ্ট বাইকের কোম্পানির নির্ধারিত গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হবে। সঠিক সময় ও সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ভালো পাওয়া যাবে ফলে ইঞ্জিন ভালো থাকবে এবং জ্বালানি খরচ কম হবে। 

৫) মোটা চাকা ব্যবহার: কোম্পানির নির্ধারিত সাইজের চাকা ব্যবহার করুন। আমরা অনেক সময় বাইকে চাকা পরিবর্তন করি। পূর্বে যে সাইজের চাকা ছিল তার চেয়ে মোটা চাকা লাগিয়ে থাকি। যার ফলে পূর্বের চেয়ে মাইলেজ কমে আসে। 

৬) টায়ার প্রেসার: নিয়মিত চাকার প্রেসার পরীক্ষা করুন। চাকায় সঠিক পরিমাণে প্রেশার না থাকলে ইঞ্জিনের তুলনামূলক শক্তি খরচ বেশি হয়। ফলে জ্বালানি খরচ বেশি হবে। 

৭) স্পার্ক প্লাগ: স্পার্ক প্লাগ নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। স্পার্ক প্লাগ এর মান খারাপ থাকলে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স খারাপ এবং জ্বালানি খরচ বেশি হবে। তাই স্পার্ক প্লাগ এর মান বেশি খারাপ থাকলে তা পরিবর্তন করে ফেলুন। এতে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ভালো পাওয়া যাবে। 

৮) এয়ার ফিল্টার: এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। কারণ এয়ার ফিল্টার জ্যাম থাকলে কার্বোরেটরে সঠিক পরিমাণে বাতাস প্রবাহিত হবে না যার ফলে জ্বালানি খরচের পরিমাণ বেড়ে যাবে। 

৯) স্বাভাবিক গতি: মনে রাখবেন স্বাভাবিক গতি ৪০-৪৫ কিলোমিটার স্পিডে বাইক চালালে জ্বালানি খরচ অনেকটাই কমে যাবে। এই জন্য বাইকের জ্বালানি খরচ কমাতে এই বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

১০) ঘন ঘন স্টার্ট: ঘন ঘন স্টার্ট করা এবং ঘন ঘন বন্ধ করা এ অভ্যাস অবশ্যই আমাদের ত্যাগ করতে হবে কারণ ইঞ্জিন ঘনঘন স্টার্ট বা বন্ধ করার কারণে জ্বালানি (পেট্রোল/ অকটেন) অনেক নষ্ট হয়ে যায়। 

১১) হঠাৎ ব্রেক করা: হঠাৎ করে ব্রেক করার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন না হলে হঠাৎ ব্রেক কখনোই করবেন না। কারণ হলো আপনি যখন বাইকে এক্সেলেটর বেশি দেন তখনই জ্বালানি বেশি খরচ হয়। তাই যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই এক্সেলেটর ব্যবহার করবেন। 

১২) ব্যস্ত রাস্তা: ব্যস্ত রাস্তা বা সময়ে ফাঁকা রাস্তা বেছে নেয়ার চেষ্টা করুন ৪০-৪৫ কিলোমিটার স্পিডে গাড়ি চালালে রাইড কন্ট্রোল সুইচ অন করুন। 

আরো পড়ুনঃ ডিসকভার ১২৫ সিসি বাইক চালানোর নিয়ম

১৩) অতিরিক্ত বোঝা: বাইকে অতিরিক্ত বোঝাই করবেন না যাত্রী ক্ষেত্রে দুই জনের অধিক নিবেন না। 

১৪) ইঞ্জিন বন্ধ রাখা: দুই মিনিটের বেশি সময় ধরে যেখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন চেষ্টা করবেন ইঞ্জিন বন্ধ রাখার জন্য যার কারণে জ্বালানি সাশ্রয় অনেকটাই হবে। 

১৫) লিক পরীক্ষা করা: মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোলের গন্ধ বের হলে কোথাও লিক হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন। পেট্রোল ট্যাঙ্কের ঢাকনা ভালো হবে পরীক্ষা করে দেখুন এছাড়াও পেট্রল ট্যাঙ্ক থেকে কার্বুরেটর লাইনগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখুন কোনভাবে লিক হয়েছে কিনা। কোনভাবে কোথাও লিক হয়ে গেলে সাথে সাথে তা পরিবর্তন বা মেরামত করে নিন। 

১৬) ব্রেক পরীক্ষা করা: আপনার মোটরসাইকেলে ব্রেক ঠিক মত কাজ করে কিনা তা দেখে নিন। মনে রাখবেন ব্রেক করার সময় সামনে এবং পিছনে ব্রেক একই সঙ্গে যেন করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। 


বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন
বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন

কোন গাড়ি তেল কম খায়

আমরা সকলে জানি ইতিমধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে ফলে বাইক ব্যবহারে খরচ  বেড়েছে। বিশেষ করে যারা বাইক রাইড করে থাকেন তাদের বাইক চালিয়ে জ্বালানি খরচ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।

এক্ষেত্রে বাইকের জ্বালানি সাশ্রয়ী বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভাবছেন। যারা নতুন বাইক কিনতে চাচ্ছেন তারা ভাবছেন জ্বালানি সাশ্রয় এমন বাইকগুলো কেনার জন্য।

আর যারা ইতিমধ্যে বাইক ব্যবহার করছেন তারাও গাড়ির পরিবর্তন করার কথা ভাবছেন। আমি এই পোস্টে জ্বালানি সাশ্রয় হবে এমন বাংলাদেশের ব্যবহৃত দশটি বাইকের লিস্ট দিব। বাইকগুলোর নাম জানতে পোস্টটি পড়তে থাকুন।  


জ্বালানি সাশ্রয় হবে এমন দশটি বাইকের নাম

১) Hero Splendor
২) TVS XL
৩) Honda Livo
৪) Honda Dream 110
৫) Runner AD 80s Deluxe
৬) Yamaha Saluto
৭) Suzuki Hayate
৮) Bajaj Platina
৯) TVS Metro
১০) TVS Radeon


শেষ কথা: আশা করি আপনারা পোস্টটি পড়ে বাইকে তেল বেশি খাওয়ার কারন সম্পর্ক বুঝতে পেরেছেন।  বাইক সম্পর্কে অন্যান্য সকল ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিজিট করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন